খুলনা জেলার প্রাচীন মন্দির সমূহ
অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনী ঃ ইতিহাসে বলা হয়েছে: “খৃষ্টপূর্ব চারশতকে দেব বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত করার সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে কৌটিল্যের তার্থশাস্ত্রে।” তবে আজকের খুলনা জেলার কোথায় প্রথম মন্দির স্থাপন করা হয়েছিলো তার সঠিক কোন তথ্য জানা যায় না। বর্তমানে খুলনা জেলায় মন্দিরের সংখ্যা ৬২৭ টি (২০০২)। আর শারদীয় দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা ৭শ ৫২টি। নিম্নে খুলনা জেলার উল্লেখযোগ্য ২৮টি প্রাচীন মন্দিরের কথা তুলে ধরা হলো।
(১) কপিলেশ্বরী মন্দির: খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে কাপিলেশ্বরী মন্দির নির্মিত হয়েছিলো। কয়েক হাজার বছর আগে এ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন কপিলদেব। একপর্যায়ে মন্দিরটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাটির নিচে চাপা পড়ে। দুর্যোগের দুশ বছর পর কপিলমুনিতে জন বসতি গড়ে ওঠলে যশোরের চাচড়ার রাজা মনোহর রায় ১৬৯৯ সালে কাপিলেশ্বরী নামে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। প্রায় দেড়শ বছর পর মন্দিরটি কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায়। ১৮৫০ সালে যশোরের ঝিকরগাছার কুঠিয়াল মেকেঞ্জি সাহেব কপিলেশ্বরীর জন্য ছোট মন্দির নির্মাণ করে কপিলমুনিতে। মন্দিরটি নির্মানের ১৭ বছর পর (১৮৬৭) প্রচন্ড ঝড়ে মন্দিরটি চুরমার হয়ে মাটির সাথে মিশে যায়। বর্তমানে কপিলমুনি বাজারের উত্তর পশ্চিম কোনে কপোতাক্ষ তীরে কপিলেশ্বরী নামের একটি মন্দির আছে।
(২) খুলনার খুল্লনেশ্বরী মন্দির: খুলনা শহরের খুলনেশ্বরী মন্দিরের কথা শোনা যায়। ড. শেখ গাউস মিয়া বলেছেন কবি কংকন বিরচিত চন্ডীমঙ্গল কাব্যের ধনপতি উপাখ্যানে ধনপতি সওদাগরের কথা বর্নিত আছে। এই ধনপতির দুই স্ত্রী ছিল। এদের নাম ছিলো লহনা ও খুল্লনা। শোনা যায় এই ধনপতি কনিষ্ঠ স্ত্রী আদরিনার খুল্লনার স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। এর নাম রাখেন খুল্লেনেশ্বরী মন্দির। এই খুল্লেনেশ্বরী শব্দ থেকেই নাকি শহরের নাম হয়েছে খুলনা। অর্থাৎ খুলনা মৌজা, কিসমত খুলনা ও শেষে তা থেকে শহর খুলনা। তাবে সে মন্দিরটি এখন আর নেই। তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
খুল্লেনেশ্বরী মন্দিরের অপর পারে আর একটা কালীবাড়ি ছিলো। তার নাম নাকি ছিলো লহনেশ্বরী কালীবাড়ি। অনেকের মতে তাকে উলুবনের কালীবাড়ি বলা হত।”
(৩) খুলনা মহানগরীর আদি কালী বাড়ি মন্দির: এ মন্দিরটি নির্মিত হয়ে আজ থেকে প্রায় গেড়শ বছর আগে। খুলনা শহরের ভৈরব নদের তীরে। এটি একটি বটগাছের দক্ষিণে সেন হাটির শ্যামাচরণ ব্যানার্জী মান্দিরটি নির্মাণ করে ছিলেন। কালীবাড়ি মন্দিরের নামানুসারে খুলনা শহরে কালীবাড়ি রোড ও কালী বাড়ি খেয়াঘাট নাম হয়েছে। বটগাছ ও মন্দিরটিকে ভৈরব নদ গ্রাম করলে বর্তমান অবস্থানে মন্দিরটি স্থানান্তরিত করা হয়।
(৪) খুলনা মহানগরীর জোড়া শিব মন্দির: খুলনা মহানগরীর ৫নং ঘাটের কাছে পাশাপাশি দুটি পূর্বমুখী শিবমন্দির বাংলা ১৩৪৩ সালে স্থাপন করেন বলদেব আগরওয়ালা নামের এক মাড়ওয়ারি। আবার কেউ কেউ দাবি করেন দেওয়ান শ্রীকৃষ্ণ রামবসু নামে এক ব্যাক্তি বাংলা ১১০৪ সালে এ দুটি মির্নাণ করেছিলেন। বর্তামনে মন্দির দুটির মধ্যে কালো পাথরে নির্মিত দুটি শিবলিঙ্গ আছে।
(৫) ভবনাথ মল্লিক জোড়া মন্দির: খুলনা মহানগরীর উত্তরাংশে মহেশ্বর পাশা গ্রামের মল্লিক পাড়ায় ভবনাথ মল্লিক জোড়া বাংলা মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দির দুটি নির্মাণ করেছিলেন ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গোপীনাথ নামের একজন ব্রাহ্মণ। মন্দির দুটি কারুকার্য খচিত করে নির্মাণ করা হয়েছিলো।
(৬) কাটানিপাড়া এক বাংলা মন্দির: খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার কাটানিপাড়া গ্রামে আনুমানিক ১৮-১৯ শতকে বা আট-বারো শতকে এক বাংলা মন্দির নির্মিত হয়েছিলো। মন্দিরটি কারুকার্য খচিত করে নির্মাণ করা হয়।
(৭) কাটনিপাড়া কালিমন্দির: দিঘলিয়া উপজেলার কানানিপাড়া গ্রামের এক বাংলা মন্দিরে একটু দূরে নির্মিত হয়েছিল একটি কাীল মন্দির। এ মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল বাংলা ১২৬৩ সালে।
(৮) কাটনিপাড়া বাসুদেব স্মৃতি মন্দির: দিঘলিয়া উপজেলার কাটানি পাড়ায় একটি সুন্দর বাসুদেব স্মৃতি মন্দির নির্মিত হয়েছিল কারুকর্য খচিত করে। একটি প্রত্মতাত্তিক জরিপ প্রতিবেদনে বসা হয়েছে: “স্থাপতিক ও কাঠামোগত বৈশিষ্ঠ্যের দিক থেকে মন্দিরটি আনু: উনিশ শতকে নির্মিত বলে ধরে নেয়া যায়। মন্দিরটিতে অবশ্য একটি লিপি সম্বলিত মর্মর পাথর সংস্থাপিত রয়েছে। এই লিপির পাঠ অনুযায়ী জনৈক স্ত্রী অধির হর চৌধুরী বাংলা ১৩৪৯ সনে রায় কুমুদবন্ধু দাশ শর্মা বাহদুরের সময়কালের বহু পূর্বেই নিজ স্মৃতি রক্ষার্থে এ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তবে এর মূল নির্মাতা শ্রী ললিত মোহন রায় যিনি বাস্তদেব পূজার্থে স্মৃতি মন্দিরটি উৎসর্গ করে ছিলেন।”
(৯) সেনহাটি কালী মন্দির: খুলনা জেলার সেনহার্টিতে ১৭৯৭ সালে একটি কালী মন্দির নির্মিত হয়ে ছিলো। এটি নির্মাণ করেছিলেন রাজা শ্রীকান্ত রায়। মন্দিরটি দোতালা।
(১০) নৈহাটির কালী মন্দির: খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামে ভৈরব নদের পূর্বপাড়ে একটি কালী মন্দির ছিলো। এ মন্দিরে কালী মূর্তির পূজা হতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মন্দিরটি লুপ্তহয়ে গেছে। তবে মন্দিরটি প্রাচীন বলে অনেকের অভিমত।
(১১) পিঠা ভোগ কালী মন্দির: খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে একটি প্রাচীন কালী মন্দির আছে। মন্দিরটি সংস্কার করায় মূল বৈশিষ্ঠ্য অেিনকটা হারিয়ে ফেলেছে।
(১২) শিববাড়ির শিব মন্দির: খুলনা মহানগরীর শিববাড়িতে অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগে প্রভেস সার্ভেয়ার উমাচরণদে একটি শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। দবির উদ্দিন আহেমদ লিখেছেন, “ইং ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত মন্দিরটি ভগ্নবস্থায় পড়িয়াছিলো এবং ঐ সালেই ধনকুবের রথ চাইল্ড কলিকাতার শিয়ালদহ হইতে খুলনা পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন করিবার জন্য খালিশপুর, শিববাড়ি প্রভৃতি বহু গ্রামের অংশ বিশেষ অঢ়ঁরংরঃড়হ বা হুকুম দখল করিয়া লয়েন। শিব মন্দিরটিও ঐ আওতায় পড়িয়া রেল কোম্পানীর দখল আসে।” তারপর নানা কারণে দীর্ঘ বছর ধরে মন্দিরটিতে পূজাসহ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পরিবেশ ছিলনা। বর্তমান মন্দিরটি সংস্কার করে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা অর্চনার কার্যক্রম চলছে।
(১৩) কয়লাঘাটা কালী মন্দির: খুলনা মহানগরীর কয়লাঘাটায় একটি কালীমন্দির স্থাপিত হয় ১৯৩৪ সালে। ১৯৭১ সালে মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আবার মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়।
(১৪) দৌলতপুর দধিবামন দেবের মন্দির: খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর সরকারি বিএল কলেজের এলাকার মধ্যে ১৯০২ ভৈরব নদের তীরে দধিবামন দেবের মন্দিরটি নির্মিত হয়। নানা ঘাত সংঘাতের মধ্যে দিয়ে মন্দিরটি স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
১৫) কেশবচন্দ্র বিদ্যা মন্দির: খুলনা মহানগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোড এবং হাজি মহাসিন রোডের সংযোগে স্থলে কেশবচন্দ্র বিদ্যা মন্দির নির্মাণ করেছিলেন জনৈক মাধব চক্রবর্তী। প্রথমে এটি ছিলো টোল। ‘১৯৩৭ সালের দিকে মন্দিরটি পাকা করা হয়। প্রচীন মন্দির রীতির স্থাপত্যকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে কেশবচন্দ্র বিদ্যামন্দির।’
(১৬) মাড়োয়ারি মন্দির: খুলনা মহানগরীর বড় বাজারের ঠাকুর বাড়ি লেনে অনেক বছর আগে নির্মিত হয়েছিলো মাড়োয়ারি মন্দির। প্রথম ভবনটি ছিলো একতলা। পরে দ্বিতল ও ত্রিতল করা হয়। মন্দিরটিতে দামী পাথর দিয়ে সৌন্দর্য্য মন্ডিত করা হয়েছিলো। সংক্ষেপে লোকে মন্দিরটিকে ‘মাড়–য়া মন্দির’ বলে থাকে।
(১৭) ধর্মসভা কালীবাড়িঃ খুলনা মহানগরীর পিকচার প্যালেস প্রেক্ষাগৃহের দক্ষিণে ধর্মসভা কালিবাড়ি অবস্থিত। বাসুদেব বিশ্বাস বাবলা লিখেছেন “ কেউ কেউ মনে করেন ধর্মসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর পুর্বে। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে ধর্মসভা কালিবাড়ি নাম পরিবর্তন কলে আর্য্য ধর্মসভা। আর্য ধর্মসভায় কালী প্রতিমা, লক্ষ্মী নারায়ন প্রতীমা, শনি প্রতীমা, মনসা প্রতীমা, শীতলা, শিবলিঙ্গ নিয়মিত পুজা আরতি পাচ্ছে।
(১৮) শীতলা বাড়ি মন্দিরঃ খুলনা মহানগরীর সরকারি এম, এম সিটি কলেজের দক্ষিন পাশে রয়েছে শীতলা বাড়ি মন্দির। প্রথমে এটি টালির ঘর ছিলো। এটি বাংলা ১৩০২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
(১৯) টুটপাড়া রক্ষা কালী মন্দিরঃ খুলনা মহানগরীর জোড়াকল বাজারের দক্ষিন পাশে টুটপাড়া রক্ষা কালী মন্দিরটি অবস্থিত। যতদুর জানা যায়, আজ থেকে প্রায় দেড়‘শ বছর পুর্ব থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি চৈত্র মাসের অমানিশায় এখানে রক্ষা কালী পুজা হচ্ছে।
(২০) পিসি রায়ের বাড়ির মন্দিরঃ খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়লি গ্রামে পিসি রায়ের বাড়িতে একটি মন্দির আছে। মন্দিরটি উনিশ শতকের শেষ অর্ধাংশের কোন এক সময় নির্মিত হয় বলে অনেকের অভিমত।
(২১) কটিপাড়ার রাসমনি মন্দিরঃ খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কটিপাড়া গ্রামে রাসমনি মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি আঠারো শতকের কোন এক সময়ে নির্মিত হয়েছিলো।
(২২) কটিপাড়া রানী রাসমনি মন্দিরঃ খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কটিপাড়া গ্রামে ১৮ শতকের কোন এক সময়ে নির্মিত হয়েছিলো। এ বিলুপ্ত মন্দিরটির নির্মাতা ছিলেন জনৈকা রানী রাসমনি।
(২৩) কটিপাড়া শিব মন্দিরঃ খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কটিপাড়া গ্রামের পশ্চিমাংশে একটি শিব মন্দির আছে। এখানে পাশাপাশি চারটি ছোট আকারেরও মন্দির আছে। শিব মন্দিরটি রানী রাসমনি মন্দিরের নির্মানের পর কোন এক সময়ে নির্মিত হয়েছে।
(২৪) কটিপাড়া দুর্গা মন্দিরঃ খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কটিপাড়ায় দু’টি দুর্গা মন্দির আছে। এ মন্দির দু’টি ১৮-১৯ শতকের কোন এক সময়ে নির্মিত হয়েছে বলে অনেকের ধারনা।
(২৫) হরি ঠাকুরের মন্দিরঃ খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার উত্তরপাড়া নামক স্থানে হরি ঠাকুর মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি ১৮ শতকের শেষ ভাগে নির্মিত হয়েছিলো।বর্তমানের মন্দিরটি পরিত্যক্ত।
(২৬) গুটুদিয়ায় তিনটি প্রাচীন মন্দির ঃ খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া গ্রামে তিনটি প্রাচীন মন্দির আছে। একটি হলো আধুনিক স্মৃতি মন্দির। দ্বিতীয়টি হলো শিব মন্দির, তৃতীয়টি হলো দুর্গা মন্দির। মন্দির তিনটি উনিশ শতকের শেষভাগে নির্মিত হয়েছিলো।
(২৭) দক্ষিনডিহি কালাচাঁদ মন্দিরঃ খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিনডিহিতে আছে কালাচাঁদ মন্দির। মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিলো আজ থেকে প্রায় ৪শ বছর আগে। কালাচাঁদ নামক জনৈক ব্যক্তি মন্দিরটি নির্মান করেছিলেন।
(২৮) শিবসা মন্দিরঃ খুলনা জেলার সুন্দরবন অংশের মধ্যে শেখের টেক নামক স্থানে রাজা প্রতাপাদিত্যের শিবসা দুর্গের কাছে শিবসা মন্দিরটি অবস্থিত। ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্র লিখেছেন, “সুন্দরবনের ভীষন অরণ্যানীর মধ্যে বিবিধ করুকার্য খচিত এবং ভগ্ন অবস্থায় দন্ডায়মান এমন মন্দির আর দেখি নাই”। মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। অনেকের ধারণা শিবসার এই কালিদা দেবীর মন্দির স্থাপন করে ছিলেন রাজা প্রতাপাদিত্য। মন্দিরটি নির্মান কাল সতের-আঠারো শতকের পিছিয়ে ধরা যায়।
খুলনা জেলার মন্দির নিয়ে ব্যাপক কোন গবেষনা হয়নি। তাই মন্দির সম্পর্কে অনেক অজানা কথা আমরা জানিনা। তবে ঐতিহাসিক ও পুরাতত্ত্ববিদগন গবেষণা চালালে হয়তো খুলনা জেলার মন্দিরকে কেন্দ্র করে নতুন ইতিহাসের জন্ম লাভ করবে বলে অনেকের অভিমত। [লেখকঃ মফস্বল সম্পাদক, দৈনিক পূবাঞ্চল, কবি, কথা সাহিত্যিক, আঞ্চলিক ইতিহাস লেখক, লোক বিজ্ঞানী, গবেষক, গীতিকার ও নাট্যকার, বাংলাদেশ বেতার।]
(১) কপিলেশ্বরী মন্দির: খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে কাপিলেশ্বরী মন্দির নির্মিত হয়েছিলো। কয়েক হাজার বছর আগে এ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন কপিলদেব। একপর্যায়ে মন্দিরটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাটির নিচে চাপা পড়ে। দুর্যোগের দুশ বছর পর কপিলমুনিতে জন বসতি গড়ে ওঠলে যশোরের চাচড়ার রাজা মনোহর রায় ১৬৯৯ সালে কাপিলেশ্বরী নামে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। প্রায় দেড়শ বছর পর মন্দিরটি কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায়। ১৮৫০ সালে যশোরের ঝিকরগাছার কুঠিয়াল মেকেঞ্জি সাহেব কপিলেশ্বরীর জন্য ছোট মন্দির নির্মাণ করে কপিলমুনিতে। মন্দিরটি নির্মানের ১৭ বছর পর (১৮৬৭) প্রচন্ড ঝড়ে মন্দিরটি চুরমার হয়ে মাটির সাথে মিশে যায়। বর্তমানে কপিলমুনি বাজারের উত্তর পশ্চিম কোনে কপোতাক্ষ তীরে কপিলেশ্বরী নামের একটি মন্দির আছে।
(২) খুলনার খুল্লনেশ্বরী মন্দির: খুলনা শহরের খুলনেশ্বরী মন্দিরের কথা শোনা যায়। ড. শেখ গাউস মিয়া বলেছেন কবি কংকন বিরচিত চন্ডীমঙ্গল কাব্যের ধনপতি উপাখ্যানে ধনপতি সওদাগরের কথা বর্নিত আছে। এই ধনপতির দুই স্ত্রী ছিল। এদের নাম ছিলো লহনা ও খুল্লনা। শোনা যায় এই ধনপতি কনিষ্ঠ স্ত্রী আদরিনার খুল্লনার স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। এর নাম রাখেন খুল্লেনেশ্বরী মন্দির। এই খুল্লেনেশ্বরী শব্দ থেকেই নাকি শহরের নাম হয়েছে খুলনা। অর্থাৎ খুলনা মৌজা, কিসমত খুলনা ও শেষে তা থেকে শহর খুলনা। তাবে সে মন্দিরটি এখন আর নেই। তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
খুল্লেনেশ্বরী মন্দিরের অপর পারে আর একটা কালীবাড়ি ছিলো। তার নাম নাকি ছিলো লহনেশ্বরী কালীবাড়ি। অনেকের মতে তাকে উলুবনের কালীবাড়ি বলা হত।”
(৩) খুলনা মহানগরীর আদি কালী বাড়ি মন্দির: এ মন্দিরটি নির্মিত হয়ে আজ থেকে প্রায় গেড়শ বছর আগে। খুলনা শহরের ভৈরব নদের তীরে। এটি একটি বটগাছের দক্ষিণে সেন হাটির শ্যামাচরণ ব্যানার্জী মান্দিরটি নির্মাণ করে ছিলেন। কালীবাড়ি মন্দিরের নামানুসারে খুলনা শহরে কালীবাড়ি রোড ও কালী বাড়ি খেয়াঘাট নাম হয়েছে। বটগাছ ও মন্দিরটিকে ভৈরব নদ গ্রাম করলে বর্তমান অবস্থানে মন্দিরটি স্থানান্তরিত করা হয়।
(৪) খুলনা মহানগরীর জোড়া শিব মন্দির: খুলনা মহানগরীর ৫নং ঘাটের কাছে পাশাপাশি দুটি পূর্বমুখী শিবমন্দির বাংলা ১৩৪৩ সালে স্থাপন করেন বলদেব আগরওয়ালা নামের এক মাড়ওয়ারি। আবার কেউ কেউ দাবি করেন দেওয়ান শ্রীকৃষ্ণ রামবসু নামে এক ব্যাক্তি বাংলা ১১০৪ সালে এ দুটি মির্নাণ করেছিলেন। বর্তামনে মন্দির দুটির মধ্যে কালো পাথরে নির্মিত দুটি শিবলিঙ্গ আছে।
(৫) ভবনাথ মল্লিক জোড়া মন্দির: খুলনা মহানগরীর উত্তরাংশে মহেশ্বর পাশা গ্রামের মল্লিক পাড়ায় ভবনাথ মল্লিক জোড়া বাংলা মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দির দুটি নির্মাণ করেছিলেন ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গোপীনাথ নামের একজন ব্রাহ্মণ। মন্দির দুটি কারুকার্য খচিত করে নির্মাণ করা হয়েছিলো।
(৬) কাটানিপাড়া এক বাংলা মন্দির: খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার কাটানিপাড়া গ্রামে আনুমানিক ১৮-১৯ শতকে বা আট-বারো শতকে এক বাংলা মন্দির নির্মিত হয়েছিলো। মন্দিরটি কারুকার্য খচিত করে নির্মাণ করা হয়।
(৭) কাটনিপাড়া কালিমন্দির: দিঘলিয়া উপজেলার কানানিপাড়া গ্রামের এক বাংলা মন্দিরে একটু দূরে নির্মিত হয়েছিল একটি কাীল মন্দির। এ মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল বাংলা ১২৬৩ সালে।
(৮) কাটনিপাড়া বাসুদেব স্মৃতি মন্দির: দিঘলিয়া উপজেলার কাটানি পাড়ায় একটি সুন্দর বাসুদেব স্মৃতি মন্দির নির্মিত হয়েছিল কারুকর্য খচিত করে। একটি প্রত্মতাত্তিক জরিপ প্রতিবেদনে বসা হয়েছে: “স্থাপতিক ও কাঠামোগত বৈশিষ্ঠ্যের দিক থেকে মন্দিরটি আনু: উনিশ শতকে নির্মিত বলে ধরে নেয়া যায়। মন্দিরটিতে অবশ্য একটি লিপি সম্বলিত মর্মর পাথর সংস্থাপিত রয়েছে। এই লিপির পাঠ অনুযায়ী জনৈক স্ত্রী অধির হর চৌধুরী বাংলা ১৩৪৯ সনে রায় কুমুদবন্ধু দাশ শর্মা বাহদুরের সময়কালের বহু পূর্বেই নিজ স্মৃতি রক্ষার্থে এ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তবে এর মূল নির্মাতা শ্রী ললিত মোহন রায় যিনি বাস্তদেব পূজার্থে স্মৃতি মন্দিরটি উৎসর্গ করে ছিলেন।”
(৯) সেনহাটি কালী মন্দির: খুলনা জেলার সেনহার্টিতে ১৭৯৭ সালে একটি কালী মন্দির নির্মিত হয়ে ছিলো। এটি নির্মাণ করেছিলেন রাজা শ্রীকান্ত রায়। মন্দিরটি দোতালা।
(১০) নৈহাটির কালী মন্দির: খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামে ভৈরব নদের পূর্বপাড়ে একটি কালী মন্দির ছিলো। এ মন্দিরে কালী মূর্তির পূজা হতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মন্দিরটি লুপ্তহয়ে গেছে। তবে মন্দিরটি প্রাচীন বলে অনেকের অভিমত।
(১১) পিঠা ভোগ কালী মন্দির: খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে একটি প্রাচীন কালী মন্দির আছে। মন্দিরটি সংস্কার করায় মূল বৈশিষ্ঠ্য অেিনকটা হারিয়ে ফেলেছে।
(১২) শিববাড়ির শিব মন্দির: খুলনা মহানগরীর শিববাড়িতে অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগে প্রভেস সার্ভেয়ার উমাচরণদে একটি শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। দবির উদ্দিন আহেমদ লিখেছেন, “ইং ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত মন্দিরটি ভগ্নবস্থায় পড়িয়াছিলো এবং ঐ সালেই ধনকুবের রথ চাইল্ড কলিকাতার শিয়ালদহ হইতে খুলনা পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন করিবার জন্য খালিশপুর, শিববাড়ি প্রভৃতি বহু গ্রামের অংশ বিশেষ অঢ়ঁরংরঃড়হ বা হুকুম দখল করিয়া লয়েন। শিব মন্দিরটিও ঐ আওতায় পড়িয়া রেল কোম্পানীর দখল আসে।” তারপর নানা কারণে দীর্ঘ বছর ধরে মন্দিরটিতে পূজাসহ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পরিবেশ ছিলনা। বর্তমান মন্দিরটি সংস্কার করে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা অর্চনার কার্যক্রম চলছে।
(১৩) কয়লাঘাটা কালী মন্দির: খুলনা মহানগরীর কয়লাঘাটায় একটি কালীমন্দির স্থাপিত হয় ১৯৩৪ সালে। ১৯৭১ সালে মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আবার মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়।
(১৪) দৌলতপুর দধিবামন দেবের মন্দির: খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর সরকারি বিএল কলেজের এলাকার মধ্যে ১৯০২ ভৈরব নদের তীরে দধিবামন দেবের মন্দিরটি নির্মিত হয়। নানা ঘাত সংঘাতের মধ্যে দিয়ে মন্দিরটি স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
১৫) কেশবচন্দ্র বিদ্যা মন্দির: খুলনা মহানগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোড এবং হাজি মহাসিন রোডের সংযোগে স্থলে কেশবচন্দ্র বিদ্যা মন্দির নির্মাণ করেছিলেন জনৈক মাধব চক্রবর্তী। প্রথমে এটি ছিলো টোল। ‘১৯৩৭ সালের দিকে মন্দিরটি পাকা করা হয়। প্রচীন মন্দির রীতির স্থাপত্যকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে কেশবচন্দ্র বিদ্যামন্দির।’
(১৬) মাড়োয়ারি মন্দির: খুলনা মহানগরীর বড় বাজারের ঠাকুর বাড়ি লেনে অনেক বছর আগে নির্মিত হয়েছিলো মাড়োয়ারি মন্দির। প্রথম ভবনটি ছিলো একতলা। পরে দ্বিতল ও ত্রিতল করা হয়। মন্দিরটিতে দামী পাথর দিয়ে সৌন্দর্য্য মন্ডিত করা হয়েছিলো। সংক্ষেপে লোকে মন্দিরটিকে ‘মাড়–য়া মন্দির’ বলে থাকে।
(১৭) ধর্মসভা কালীবাড়িঃ খুলনা মহানগরীর পিকচার প্যালেস প্রেক্ষাগৃহের দক্ষিণে ধর্মসভা কালিবাড়ি অবস্থিত। বাসুদেব বিশ্বাস বাবলা লিখেছেন “ কেউ কেউ মনে করেন ধর্মসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর পুর্বে। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে ধর্মসভা কালিবাড়ি নাম পরিবর্তন কলে আর্য্য ধর্মসভা। আর্য ধর্মসভায় কালী প্রতিমা, লক্ষ্মী নারায়ন প্রতীমা, শনি প্রতীমা, মনসা প্রতীমা, শীতলা, শিবলিঙ্গ নিয়মিত পুজা আরতি পাচ্ছে।
(১৮) শীতলা বাড়ি মন্দিরঃ খুলনা মহানগরীর সরকারি এম, এম সিটি কলেজের দক্ষিন পাশে রয়েছে শীতলা বাড়ি মন্দির। প্রথমে এটি টালির ঘর ছিলো। এটি বাংলা ১৩০২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
(১৯) টুটপাড়া রক্ষা কালী মন্দিরঃ খুলনা মহানগরীর জোড়াকল বাজারের দক্ষিন পাশে টুটপাড়া রক্ষা কালী মন্দিরটি অবস্থিত। যতদুর জানা যায়, আজ থেকে প্রায় দেড়‘শ বছর পুর্ব থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি চৈত্র মাসের অমানিশায় এখানে রক্ষা কালী পুজা হচ্ছে।
(২০) পিসি রায়ের বাড়ির মন্দিরঃ খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়লি গ্রামে পিসি রায়ের বাড়িতে একটি মন্দির আছে। মন্দিরটি উনিশ শতকের শেষ অর্ধাংশের কোন এক সময় নির্মিত হয় বলে অনেকের অভিমত।
(২১) কটিপাড়ার রাসমনি মন্দিরঃ খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কটিপাড়া গ্রামে রাসমনি মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি আঠারো শতকের কোন এক সময়ে নির্মিত হয়েছিলো।
(২২) কটিপাড়া রানী রাসমনি মন্দিরঃ খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কটিপাড়া গ্রামে ১৮ শতকের কোন এক সময়ে নির্মিত হয়েছিলো। এ বিলুপ্ত মন্দিরটির নির্মাতা ছিলেন জনৈকা রানী রাসমনি।
(২৩) কটিপাড়া শিব মন্দিরঃ খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কটিপাড়া গ্রামের পশ্চিমাংশে একটি শিব মন্দির আছে। এখানে পাশাপাশি চারটি ছোট আকারেরও মন্দির আছে। শিব মন্দিরটি রানী রাসমনি মন্দিরের নির্মানের পর কোন এক সময়ে নির্মিত হয়েছে।
(২৪) কটিপাড়া দুর্গা মন্দিরঃ খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কটিপাড়ায় দু’টি দুর্গা মন্দির আছে। এ মন্দির দু’টি ১৮-১৯ শতকের কোন এক সময়ে নির্মিত হয়েছে বলে অনেকের ধারনা।
(২৫) হরি ঠাকুরের মন্দিরঃ খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার উত্তরপাড়া নামক স্থানে হরি ঠাকুর মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি ১৮ শতকের শেষ ভাগে নির্মিত হয়েছিলো।বর্তমানের মন্দিরটি পরিত্যক্ত।
(২৬) গুটুদিয়ায় তিনটি প্রাচীন মন্দির ঃ খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া গ্রামে তিনটি প্রাচীন মন্দির আছে। একটি হলো আধুনিক স্মৃতি মন্দির। দ্বিতীয়টি হলো শিব মন্দির, তৃতীয়টি হলো দুর্গা মন্দির। মন্দির তিনটি উনিশ শতকের শেষভাগে নির্মিত হয়েছিলো।
(২৭) দক্ষিনডিহি কালাচাঁদ মন্দিরঃ খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিনডিহিতে আছে কালাচাঁদ মন্দির। মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিলো আজ থেকে প্রায় ৪শ বছর আগে। কালাচাঁদ নামক জনৈক ব্যক্তি মন্দিরটি নির্মান করেছিলেন।
(২৮) শিবসা মন্দিরঃ খুলনা জেলার সুন্দরবন অংশের মধ্যে শেখের টেক নামক স্থানে রাজা প্রতাপাদিত্যের শিবসা দুর্গের কাছে শিবসা মন্দিরটি অবস্থিত। ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্র লিখেছেন, “সুন্দরবনের ভীষন অরণ্যানীর মধ্যে বিবিধ করুকার্য খচিত এবং ভগ্ন অবস্থায় দন্ডায়মান এমন মন্দির আর দেখি নাই”। মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। অনেকের ধারণা শিবসার এই কালিদা দেবীর মন্দির স্থাপন করে ছিলেন রাজা প্রতাপাদিত্য। মন্দিরটি নির্মান কাল সতের-আঠারো শতকের পিছিয়ে ধরা যায়।
খুলনা জেলার মন্দির নিয়ে ব্যাপক কোন গবেষনা হয়নি। তাই মন্দির সম্পর্কে অনেক অজানা কথা আমরা জানিনা। তবে ঐতিহাসিক ও পুরাতত্ত্ববিদগন গবেষণা চালালে হয়তো খুলনা জেলার মন্দিরকে কেন্দ্র করে নতুন ইতিহাসের জন্ম লাভ করবে বলে অনেকের অভিমত। [লেখকঃ মফস্বল সম্পাদক, দৈনিক পূবাঞ্চল, কবি, কথা সাহিত্যিক, আঞ্চলিক ইতিহাস লেখক, লোক বিজ্ঞানী, গবেষক, গীতিকার ও নাট্যকার, বাংলাদেশ বেতার।]
0 comments:
Post a Comment
Thanks you Visit Awesome Raja.
www.awesomeraja.ml
classicalsujon@gmail.com